শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর ( নীলফামারী) প্রতিনিধি:
একটিমাত্র পন্যকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বিশাল হাট। যেখানে প্রতিদিন বেচাবিক্রি হয় কোটি টাকারও উপড়ে। ব্যাতিক্রমী এই হাটের পন্যটিও বেশ ভিন্ন রকম। তা হলো কাঁচামরিচ। উত্তরাঞ্চলে মরিচের হাট নামে পরিচিতি পেলেও এর নাম মূলতঃ পাগলীমার হাট।
নীলফামারীর ডোমার উপজেলার পাঙ্গামটুকপুর ইউনিয়নের মেলাপাঙ্গা গ্রামে এটির অবস্থান। মরিচের জন্য হাটটি বিখ্যাত। এখানে রয়েছে অর্ধশত আড়ত। দূর-দূরান্তের ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় সারাদিন মুখর থাকে এসব আড়ত।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, হাটকে ঘিরে এ অঞ্চলে একদিকে যেমন বেড়েছে মরিচের চাষ তেমনি বেড়েছে মরিচ ব্যবসায়ীর সংখ্যা। মরিচের এই হাটে ডোমার, ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার শত শত মরিচ চাষিরা মরিচ বিক্রি করতে আসেন।
সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সেখানে চলে মরিচ কেনাবেচা। ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মরিচ কিনে নিয়ে যান ব্যবসায়ীরা। হাটে প্রতিদিন প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার মণ মরিচ বিক্রি হয় যার মূল্য কোটি টাকার উপরে।
হাটের আড়তদার সমিতির সভাপতি এনতাজুল হক বলেন, মরিচের মৌসুমে বছরে প্রায় চার মাস এই হাটটি বসে। তখন সপ্তাহের সাতদিনই চলে মরিচের কেনাবেচা। এখানকার মরিচ ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নওগাঁ, যশোর, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায়।
তিনি আরো বলেন, এই হাট সমগ্র নীলফামারী জেলার একটা জনপ্রিয় হাট কিন্তু হাটের উন্নয়নে আমরা প্রশাসনকে বিভিন্নভাবে অবহিত করলেও সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না। কৃষি বিভাগ সুদৃষ্টি দিলে কিছু প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ভবিষ্যতে আমরা আরো অগ্রসর হতে পারব।
মঙ্গলবার সকালে হাটে গিয়ে দেখা যায় চারদিকে মরিচের ছোট-বড় স্তুপ। এর মাঝেই
মরিচ চাষী আরিফ বলেন, আমার তিন বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করতে ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রায় লাখ খানেক টাকার মরিচ বিক্রি করেছি। আবহাওয়া যদি ভালো থাকে, আরও এক লাখ টাকার মরিচ বিক্রি করতে পারব।
আরেক মরিচ চাষী আফজাল হোসেন জানান, এই মরিচের হাটকে কেন্দ্র করে দূর-দূরান্তের মরিচ ব্যবসায়ীরা এখানে এসে ট্রাকে করে মরিচ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে এলাকার কৃষকরা মরিচের দাম পেয়ে মরিচ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন এবং এই অঞ্চলে মরিচ এখন প্রধান অর্থকরী ফসলে পরিণত হয়েছে।
আমিনুর রহমান নামে স্থানীয় একজন বলেন, এই হাটে মাত্র চার মাস আমরা ব্যবসা করে থাকি। মরিচ শেষ হলে হাটটি জনশূন্য হয়ে পড়ে ফলে বিক্রি কমে যায়। আমরা এই চার মাসের আয় দিয়ে ১২ মাস চলি।
কুষ্টিয়া থেকে আসা পাইকার মজিবর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, এটি উত্তরাঞ্চলের বিখ্যাত মরিচের হাট। কয়েক বছর ধরে আমি এই হাট থেকে মরিচ কিনছি। এখান থেকে আমি বিভিন্ন জাতের মরিচ কিনে নিয়ে যাই। টাকা লেনদেন বা বাড়তি কোনো ঝামেলা নেই।
হাটের আড়তদার রিমন বলেন, এখান থেকে মরিচ কিনে চট্টগ্রামে নিয়ে বিক্রি করা হয়। পাগলীমার হাটের মরিচ চট্টগ্রামে খুবই জনপ্রিয় বলে জানান তিনি ।
আরেক আড়তদার নেয়ামুল জানান, এখান থেকে মরিচ কিনে ট্রাকে করে খুলনায় নিয়ে যাওয়া হয়। আমদানির ওপর নির্ভর করে মরিচের চাহিদা। তারপরও প্রতিদিন তিন-চার ট্রাক করে মরিচ খুলনায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এই হাট থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০ ট্রাক মরিচ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যায় বলে জানিয়েছেন আড়তদার মেরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, সকালে হাটে এসে মরিচ কিনে সন্ধ্যায় ট্রাকে করে রাজশাহীতে মরিচ পাঠানো হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আনিছুজ্জামান সংবাদকর্মীদের বলেন, কৃষি বিভাগের অব্যাহত পরামর্শ এবং নির্দেশনায় এই অঞ্চলে মরিচের উৎপাদন বেড়েছে। ভালো জাতের মরিচ চাষে কৃষকদের সার্বিক সহযোগীতা করছি। ফলে তারা সবাই উপকৃত হচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, উপজেলায় এ বছর মরিচ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৫০ হেক্টর। তার মধ্যে আমরা ৭৮০ হেক্টর অর্জন করেছি। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় মরিচের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি বাজারে ভালো দাম থাকায় চাষীরা লাভবান হচ্ছেন।