সিলেট প্রতিনিধি,১৯ নভেম্বর ২০২২,
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সারা দেশের মানুষের দাবি এক, দফা এক- বর্তমান জালিম সরকার শেখ হাসিনার পদত্যাগ। তিনি বলেন, এই বার মানুষ জেগে উঠেছে। মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে। আমাদের হারিয়ে যাওয়া অধিকার ফিরিয়ে আনতে চাই। আমারা জনগণের সরকার আনতে চাই। তত্তাবধায়ক সরকারের অধিনে ছাড়া বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।
নিত্যপণ্যের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তির দাবিতে শনিবার সিলেটে আয়োজিত বিএনপির গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুমের সভাপতিত্বে সিলেট মহানগরের চৌহাট্টা এলাকার সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে আয়োজিত এ গণসমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিলেটবাসীর উদ্দেশে বলেন, আপনারা নতুন যুদ্ধে নেমেছেন। এই যুদ্ধ মুক্তির যুদ্ধ। এ যুদ্ধ নিজের অধিকার ফিরিয়ে আনার যুদ্ধ। এ যুদ্ধ নিজের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার যুদ্ধ। এই সিলেট থেকেই মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। সেখান থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে। আজকে এই সৈরচারী আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে এবং গণতন্ত্র ফেরাতে এই সিলেট থেকেই আবার যুদ্ধ শুরু হলো।’
মির্জা ফখরুল বলেন, খেটে খাওয়া মানুষ, কৃষক শান্তিতে নাই। সবকিছুর দাম বেড়েছে। হাসিনা বলেছিল, ১০ টাকা চালখাওয়াবে। এখন চালক ৭০ টাকা, ৮০ টাকা। এই যে একটা ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। গত ১৪ বছর অত্যাচারের স্টিম রুলার চালিয়ে দেশকে তলাবিহিন রাষ্ট্রে পরিণত করেছে শেষ হাসিনা সরকার।
তিনি আরও বলেন, এই সরকারের বিচার হবে আদালতে। মানুষের কথা বলার অধিকার, ভোটের অধিকার হরণ করার জন্য বিচার হবে।
মীর্জা ফখরুল দেশের নিখোঁজ হওয়া মানুষ সম্পর্কে বলেন, ইলিয়াস আলী এখন আমাদের মাঝে নেই। তার মেয়েটা প্রতিদিন দরজায় তাকিয়ে তাকে, এই বুঝি তার বাবা ফিরে আসবে। এরকম ৬ শ মানুষ নিখোঁজ হয়ে গেছে। কেউ জানে না, তারা কোথায়।
তিনি আরও বলেন, সারা বাংলাদেশে অসংখ্য নেতাকে তারা গুলি করে হত্যা করেছে। আর আবার নতুন খেলা শুরু করেছে , মামলা-মামলা খেলা। গায়েবি মামলা। নাশকতার মামলা। কেউ জানেই না কোথায় নাশকতা হয়েছে।
এইভাবে ১৪টা বছর তারা আমাদের ওপর অত্যাচার করেছে। সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী ও মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মিফতাহ সিদ্দিকীর পরিচালনায় শুরু হওয়া সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য দেন মহানগর মহিলা দলের সভাপতি রোকসানা বেগম শাহনাজ। এর আগে কোরআন তেলাওয়াত ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে সকাল সাড়ে ১১টায় সমাবেশ শুরু হয়। পরে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ধারাবাহিকভাবে বক্তব্য শুরু করেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, আওয়ামী লীগ শুধু খেলার ডাক দেয়। ওবায়দুল কাদের খেলতে চান। খেলা আগে শিখেন।
বিএনপি খেলার জন্য প্রস্তুত। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন খেলেন। তারা দরজা বন্ধ করে খেলায় পারদর্শী। যে কারণে পাপিয়ারা ধরা পড়লে ওবায়দুল কাদের আর তার দলের নেতাদের বুক ধড়ফড় করে।
তিনি আরও বলেন, সমাবেশ পন্ড করতে সরকার বাস, ট্রাক ট্রেন বন্ধ করে কত কোটি টাকার ক্ষতি করেছে ? পেটোয়া বাহিনি দিয়ে দিয়ে সমাবেশ পন্ড করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু জনগণ সমাবেশ সফল করে উচিত জবাব দিয়েছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, সিলেটবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই এ কারণে যে, আজকের গণসমাবেশে সিলেটের আলিয়া মাদরাসার মাঠ কানায় কানায় ভর্তি।
বিএনপি’র চেয়ারপার্সন উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলেন, দুর্ভিক্ষের দোহাই দিয়ে ক্ষমতায় ঠিকে থাকা যাবে না। এই সরকার প্রধান বিশ্বে প্রথম সরকার প্রধান যিনি ভবিষ্যত বাণী করেছেন তার দেশে আগামী বছর দুর্ভিক্ষ হবে। দুর্ভিক্ষ কিভাবে এড়ানো যাবে সিলেটের মাঠ থেকে বলতে চাই, ১৮ কোটি টাকার ইভিএম প্রজেক্ট করেছেন, নতুন নতুন ফাইল বানান লাভ হবেনা। দুর্ভিক্ষের দুহাই দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার চিন্তা থেকে বাদ দিয়ে আসেন, দেশে দুর্ভিক্ষ হবে না।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেত্রী শাম্মি আক্তার বলেন, ১০ ডিসেম্বর আমরা ঢাকা শহরে আসছি। কোন ধানাইপানাই চলবে না। ক্ষমতা ছাড়েন। না হলে ক্ষমতা থেকে টেনে নামানো হবে।