মঙ্গলবার, ০১ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:১২ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ
মনোবল হারাবেন না, অভ্যুত্থানে আহতদের পাশে থাকবে সেনাবাহিনী–সেনা প্রধান ডেইরী ফার্ম এখন ডেরা রিসোর্ট , ক্ষমতার দাপটে ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে রিসোর্ট দ্রুত নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা জনগনের হাতে তুলে দিন ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উদ্বোধন হলো স্বপ্নের যমুনা রেলসেতু  মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের অফিসিয়াল ফোন ক্লোন করে অর্থ দাবি ঘিওরে নানা আয়োজনে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত মানিকগঞ্জে হাসপাতাল থেকে শিশু চুরি, ৩ ঘন্টা পর উদ্ধার সিরাজগঞ্জে মসজিদের টাকা তোলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে নিহত-১ আছিয়ার শোক শেষ না হতেই সিরাজগঞ্জে ৯ বছরের শিশু ধর্ষনের শিকার সমৃদ্ধশালী দেশ গড়তে একটি গণতান্ত্রিক  সরকার ব্যবস্থা দ্রুত দরকার—– ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে   চৌহালীর বৈন্যা গণহত্যায় নিহতদের ৫২ বছরেও শহীদের মর্যাদা মেলেনি 

প্রতিনিধির নাম:
  • আপডেট করা হয়েছে: রবিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২২
  • ১৩৭ দেখা হয়েছে:
মাহমুদুল হাসান,  চৌহালী( সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি :
১৯৭১ সালের ২৫ অক্টোবর মহান মুক্তিযুদ্ধকালে সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার খাষপুখুরিয়া ইউনিয়নের বৈন্যা গ্রামে পাকহানাদার বাহিনীর নৃশংশ গণহত্যায় নিহতদের শহীদের মর্যাদা মেলেনি স্বাধীনতার ৫২ বছরেও। ফলে যাদের আত্নত্যাগের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে সেই সব নিহতের পরিবারের সদস্যরা আজও অবহেলিত। প্রতিটা ক্ষেত্রে অবহেলা আর অবজ্ঞায় তারা বঞ্চিত ও লাঞ্ছিত হচ্ছে। অথচ তাদের সর্বচ্চ মর্যাদা পাওয়া উচিত ছিল।
এমনি বঞ্চনার স্বীকার শহীদ শাহজাহানের স্ত্রী ফিরোজা বেগম ও শহীদ হারুন অর রশিদের ছেলে রফিকুল ইসলাম বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ অক্টোবর মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকহানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার গয়হাটা ইউনিয়নের বনগ্রাম (রসুলপুর) ও সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার খাষপুখুরিয়া ইউনিয়নের বৈন্যা গ্রামের দুলাল সরকারের ফাঁকা বাড়িতে শত শত নিরিহ মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধা সমবেত হয়। রাজাকারদের গোপন সংবাদ পেয়ে পাক হানাদার বাহিনী নাগরপুর থেকে বনগ্রাম (রসুলপুর) এবং চৌহালীর বৈন্যা গ্রামের ওই বাড়িতে পৃথক দু‘টি অভিযান চালিয়ে শতাধিক বাড়িঘর আগুন  দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। এ আগুনে পুড়ে বেশ কিছু গবাদিপশুও মারা যায়। এছাড়া পাকবাহিনী ৭৫/৮০জন নিরিহ মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাকে নৃশংশ ভাবে হত্যা করে। এর মধ্যে চৌহালী উপজেলার খাষপুখুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের বড় ভাই হারুন অর রশিদ, ভগ্নিপতি শাহজাহানসহ একই পরিবারের ৭ সদস্য রয়েছেন। এছাড়া আশপাশ এলাকার আরও প্রায় ২৫/৩০ জন নিরিহ মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধা এ হত্যার শিকার হয়। পরবর্তীতে চৌহালী উপজেলার বৈন্যা গ্রামের গণহত্যায় নিহতদের বৈন্যা গ্রামের গণকবরে দাফন করা হয়। ২০১৭ সালে সিরাজগঞ্জের গণহত্যা অনুসন্ধান কমিটি স্থানীয়দের সহযোগিতায় ১৪ জন শহীদের নাম ঠিকানা উদ্ধার করেন। এরপর চৌহালী উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা দেওয়ান মওদুদ আহমেদের সহযোগিতায় বন্যা গ্রামের গণকবরে ১৪জন শহীদের নাম ফলক স্থাপন করা হয়। এ ১৪ শহীদ হলেন, বৈন্যা গ্রামের মৃত ওসমান গণির ছেলে হারুন অর রশিদ, একই গ্রামের কুজতর আলী, সোনাউল্লাহ. আব্দুল লতিফ, তৈয়মুদ্দিন মুন্সী,আব্দুল মিয়া, আব্দুস সামাদ, মনির উদ্দীন, আব্দুল কুদ্দুস, আবু ফকির, নেরো শেখ, টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার গয়হাটা ইউনিয়নের বনগ্রাম (রসুলপুর) গ্রামের বাদশা ব্যাপারীর ছেলে শাহজাহান, আব্দুস ছাত্তার, সহবতপুর ইউনিয়নের কোকাদাইর গ্রামের গোবিন্দ পাটনির নাম জানা যায়। বাকিদের নাম পরিচয় আজও জানা যায়নি। এ হত্যাযজ্ঞের খবর পেয়ে মিত্রবাহিনী ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা যৌথ আক্রমণ চালায়। ফলে পাক হানাদারবাহিনীর সাথে যোথ বাহিনীর তুমুল যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা পাক হানাদারবাহিনীর বেশ কয়েকটি ট্যাংক ধ্বংস করে। এছাড়া এ আক্রমণে পাকহানাদারবাহিনীর বেশ কয়েকজন নিহত হয়। আহত হয় অনেক পাক সেনা। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পাকহানাদার বাহিনীর সদস্যরা আহত পাকসেনাদের নিয়ে ওই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। ওইদিন থেকে মূলত চৌহালী থানা হানাদার মুক্ত হয়। এ গণহত্যায় নিহত শহীদ ও তাদের পরিবারের সদস্যরা আজও অবহেলিতই রয়েগেছে।
শহীদ শাহজাহানের স্ত্রী ফিরোজা বেগম মুত্যুর আগে রাষ্ট্রীয় ভাবে তার স্বামীর শহীদ মর্যাদা দেখে যেতে চান। কান্না জনিত কণ্ঠ তিনি বলেন, ১৯৭১সালের ২৫ অক্টোবর পাকহানাদারদের হাতে নির্মম ভাবে হত্যার শিকার হন। তার লাশটাও আমরা ফেরত পাইনি। পরে জানতে পারি বৈন্যা গণকবরে তাকে দাফন করা হয়েছে। স্বামীকে হারিয়ে অনেক কষ্টে দুই সন্তানকে মানুষ করেছি। মৃত্যুর আগে স্বামীর শহীদ মর্যাদা দেখে যেতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর যোগ্য কন্যা। তার কাছে আমার স্বামীসহ বৈন্যা গ্রামের গণকবরের সকল শহীদদের শহীদ মর্যাদা প্রদানের জোর দাবী করছি।
শহীদ হারুন অর রশিদের ছেলে রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা শিশু কালে বাবা হারা হয়ে অবহেলা আর অনাদরে বড় হয়েছি। আমার মা অনেক কষ্ট করে আমাদের মানুষ করেছে। সন্তান হিসাবে আমাদের প্রাপ্য মর্যাদা  পেলেই আমরা খুশি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার আকুল আবেদন, আমার বাবাসহ ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোষোরদের হাতে গণহত্যায় নিহত সকল শহীদদের অবিলম্বে রাষ্ট্রীয় ভাবে শহীদ মর্যাদা প্রদানের জোর দাবি জানাছি।
এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক ওয়ারেন্ট অফিসার আফতাব উদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে ৯ মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধান করেছি। বঙ্গবন্ধু আমাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে সনদ দিয়ে সম্মানিত করেছে। আমরা আমাদের প্রাপ্য মর্যাদা পেয়েছি। এখন আমার দাবি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকালে গণহত্যায় নিহতদের রাষ্ট্রীয় ভাবে শহীদ মর্যাদা প্রদানের জোর দাবী জানাচ্ছি।
১১নং সেক্টরে যুদ্ধকারী বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুস ছালাম মিয়া ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদুল আলম বলেন, আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। অথচ মুক্তিযুদ্ধকালে গণহত্যায় নিহদের এখনও রাষ্ট্রীয় ভাবে শহীদ মর্যাদা দেয়া হয়নি। এ সব শহীদদের পরিবার আজও অবহেলিত। তাদের অনেকেই অর্থাভাবে বিনা চিকিৎনায় ধুকে ধুকে মরছে। অনেকের ঘরে খাবার নেই। তারা অন্যের দ্বারে দ্বারে চেয়ে চিন্তে জীবন ধারণ করছে। অবিলম্বে তাদের প্রাপ্য মর্যাদা দেয়া হোক। এ বিষয়ে আমরা প্রধানমসবত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি ও হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ বিষয়ে খাষপুখুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজারুর রহমান বলেন,বন্যা গ্রামের যুদ্ধে আমার বড় ভাইসহ আমাদের পরিবারের ৭জন নিহত হয়। সকল নিহতদের সাথে ওই ৭জনকেও বৈন্যা গ্রামের ওই গণকবরে সমাহিত করা হয়। গণকবরে স্থাপিত ফলকে তাদের নাম থাকলেও রাষ্ট্রীয় ভাবে তাদের শহীদ মর্যাদা না দেয়ায় আমরা মর্মাহত। আমরা বৈন্যা গণকবরের সকল শহীদকে রাষ্ট্রীয় ভাবে শহীদ মর্যাদা দেয়ার জোর দাবী যানাচ্ছি।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জের গণহত্যা অনুসন্ধান কমিটির আহব্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল ইসলাম বলেন,আমরা ২০১৭ সাল থেকে চৌহালীসহ সিরাজগঞ্জের সবগুলো গণহত্যা নিয়ে অনুসন্ধানের পাশাপাশি নিহত শহীদদের রাষ্ট্রীয় ভাবে শহীদ মর্যাদা প্রদানের দাবীতে আন্দোলন করে আসছি। সরকার এদিকে নজর না দেয়ায় এখনও তারা রাষ্ট্রীয় ভাবে শহীদ মর্যাদা পায়নি। অথচ বঙ্গবন্ধু সে সময় সকল শহীদদের বাড়ি বাড়ি পত্র প্রেরণ করে সম্মন জানিয়েছিলেন। পরবর্তীতে এ সব শহীদদের রাষ্ট্রীয় ভাবে শহীদ মর্যাদা না দেয়ায় তারা আজও অবহেলিত। দিনি অবিলম্বে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধকালিন সকল গণহত্যায় নিহতদের রাষ্ট্রীয় ভাবে শহীদ মর্যাদা প্রদানের জোর দাবী জানান। #

আর্টিকেলটি শেয়ার করুন:

এই ক্যাটাগরির আরো খবর
© All rights reserved ©
themesba-lates1749691102