এইচএম মোকাদ্দেস ,সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:
অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে দু’মাসের মেডিক্যাল ছুটি নিয়ে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. খলিলুর রহমান সিরাজীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে নেমেছেন আফিয়া আফরোজা মিনা নামের এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। সরকারি নিষেধ অমান্য করে স্কুল ফাঁকি দিয়ে স্বামীর ভোট প্রার্থনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি।
অভিযুক্ত শিক্ষিকা আফিয়া আফরোজা মিনা সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার গৌরী আরবান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা এবং কাজিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চেয়ারম্যান প্রার্থী খলিলুর রহমান সিরাজীর স্ত্রী।
সম্প্রতি কাজিপুর উপজেলার গোদাগাড়ি গাড়াবেড় এলাকায় চেয়ারম্যান প্রার্থী খলিলুর রহমান সিরাজীর আনারস প্রতিকের নির্বাচনী জনসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন শিক্ষিকা আফিয়া আফরোজা মিনা। এ সময় সভায় উপজেলা যুবলীগের বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক আলী আসলামসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে শিক্ষিকার এমন নির্বাচনী প্রচারের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি নিয়ে স্থানীয় মহলে বেশ আলোচনা হচ্ছে। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবি এবং ভিডিওতে এই শিক্ষিকাকে তার স্বামী খলিলুর রহমান সিরাজীর নির্বাচনী প্রতীক আনারস মার্কায় ভোট দেওয়ারও আহবান জানান। নির্বাচনী মতবিনিময় শেষে আনারস প্রতীকের পক্ষে বিভিন্ন গ্রামে উঠান বৈঠক ও প্রচারপত্র বিলি করে চলেছেন ওই স্কুল শিক্ষিকা।
সিরাজগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের নির্বাচনের প্রচার অংশ না নেওয়ার বিষয়ে পরিপত্র জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এটি বাস্তবায়নের জন্য নির্বাচন কমিশন মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশও দিয়েছে।
ইসির পক্ষ থেকে জারি করা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিপত্রে বলা হয়েছে, ‘সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তাহার নিজের বা অন্যের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় সরকারি যানবাহন, সরকারি প্রচারযন্ত্রের ব্যবহার বা অন্যবিধ সরকারি সুবিধা ভোগ করিতে পারিবেন না এবং এতদুদ্দেশ্যে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারী বা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বা কর্মকর্তা-কর্মচারিকে ব্যবহার করিতে পারিবেন না।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, কাজিপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান সিরাজীর স্ত্রী আফিয়া আফরোজা মিনা একজন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ও ভোট চাইতে পারবে না এমন পরিপত্র থাকলেও খলিলুর রহমান সিরাজী স্ত্রীর ব্যাপারে তা ব্যতিক্রম। তিনি মাসের পর মাস প্রতিদিনই নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। অথচ তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না শিক্ষা অধিদফতর বা প্রশাসন। এসব বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করলেই তাকে নানাভাবে হয়রানী ও নির্যাতন করেন খলিল বাহিনীর সদস্যরা। এজন্য ভয়ে কেউ কিছুই বলতে পারেন না।
এ বিষয়ে গৌরী আরবান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা আফিয়া আফরোজা মিনার বক্তব্য নেয়ার জন্য তার মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে গৌরী আরবান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নাজ শারমিন সুরভী মোবাইলে বলেন, আমার বিদ্যালয়ে আফিয়া আফরোজা মিনা নামে একজন শিক্ষিকা আমার বিদ্যালয়ে আছেন। তিনি ২ মাসের মেডিকেলের ছুটি ছিলেন। গত সপ্তাহে এসে যোগদান করেছেন। আবারও তিনি ২৮ এপ্রিল পারিবারিক সমস্যা জনিত কারণ দেখিয়ে দুদিনের ছুটি নিয়েছেন।
আপনার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সহকারী শিক্ষিকা মিন নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন এমন প্রশ্ন করলে এই প্রধান শিক্ষিকা বলেন, তার স্বামী কাজিপুর উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন এটা শুনেছি। তবে প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন কিনা জানি না। প্রচারণায় অংশ নেওয়ার প্রমাণ পেলে আমাদের নিয়ন্ত্রিত প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অবগত করবো। তারা বিধি অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হারুনর রশিদ বলেন, নির্বাচনী প্রচারণায় একজন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা অংশ নিতে পারবেন কিনা বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এ বিষয়ে যদি ইসির নির্দেশনা থাকে, আর সেই নির্দেশনা কেউ যদি অমান্য করে তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কাজীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সোহরাব হোসেন বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে।
সিরাজগঞ্জ জেলা নির্বাচন অফিসার মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, কোন নির্বাচনেই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না। কোন শিক্ষক এ বিষয়ে বিধি লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙনে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।####